বাংলার নির্বাচন ও নিরপেক্ষতা
- Mayukh Basu
- Mar 27, 2021
- 7 min read
"দেশে ভোট চলছে, বাংলায় বিশ্বযুদ্ধ"!
২ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনের সময় ফেসবুকে এটা পোস্ট করেছিলাম। মজার ছলে লেখা হলেও কথাটা যে ১০০% খাঁটি সে বিষয়ে আর সন্দেহের অবকাশ আছে কি? আজ বাংলায় ভোট শুরু হয়েছে, যুদ্ধের কিছু নমুনা ইতিমধ্যেই টিভির পর্দায় আমরা দেখেছি!
যাইহোক, সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছি তো, তাই এতদিনে আমরা সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি হয়তো! অনেকেই এই নিয়ে বলাবলি, লেখালেখি করেন জানি, তবে তাতে যে লুম্পেনদের দল একেবারেই কান দেয় না সেটাও আমরা জানি। তাই, এই দাঙ্গা হাঙ্গামায় আর কোনো নতুনত্ব খুঁজে পাই না!
তবে এবারে ভোটে, বা বলা ভালো গত ৮-১০ বছরের ভোটে, ২৪ ঘন্টার সংবাদ চ্যানেলের দৌলতে আমাদের যেটা নতুন প্রাপ্তি হয়েছে, সেটা হলো কথার লড়াই! মানে ভোটের কয়েকমাস আগে থেকে সন্ধ্যে হলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের, বা কখনও তথাকথিত "নিরপেক্ষ" বুদ্ধিজীবীদের ষ্টুডিওতে এনে, "মহাবিতর্ক", "মহাযুদ্ধ" বা "ক্রসফায়ার" গোছের একটা অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে ওনাদের একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়া। এই আমাদের নতুন প্রাপ্তি!
বিতর্ক বা ডিবেট তো আমরা সবাই ছাত্রজীবনে কমবেশী করেছি। তাই ব্যাপারটা শুনতে আপাতদৃষ্টিতে খারাপ একেবারেই নয়। কিন্তু তাও, এই মহাযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার নিয়ে আমার দুটো বক্তব্য রয়েছে। প্রথমটি ছোট্ট, দ্বিতীয়টির দৈর্ঘ্য কিঞ্চিৎ বেশি!
এক, ডিবেট বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি, তা হলো একটি বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে নিজের যুক্তিসম্মত মতামত পেশ করা, এবং অন্যান্য বক্তাদের মত মন দিয়ে শুনে তা খণ্ডন করার প্রচেষ্টা করা (যাকে ইংলিশে বলে rebuttal)। এবং অবশ্যই এই পুরো ব্যাপারটার মধ্যে বিপক্ষকে সম্মান করা এবং একটা ন্যূনতম শালীনতা বজায় রাখাটা যে সবথেকে জরুরি তা আমরা ছেলেবেলাতেও জানতাম!
কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় আমরা রোজ সন্ধ্যেবেলা যা দেখি, তাকে আর যাইহোক সুস্থ ডিবেট বলা চলে কি? ভদ্র ভাষায় বললে চিৎকার-চেঁচামেচি, গোদা বাংলায় গলায় বাঁশ দিয়ে চেঁচানো বা ইংলিশে fracas অথবা brawl, এইগুলো বললেও বলা যেতে পারে। ডিবেট ওগুলো কোনোমতেই নয়! আর শালীনতার কথা নাহয় নাই লিখলাম!
তবে বাংলার মানুষ নিশ্চয় এইরকম অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করেন, হয়তো তাই একটা-দুটো নয়, প্রায় সব সংবাদ চ্যানেলেই একই ছবি দেখা যায় রোজ!
এবার আসি আমার দ্বিতীয় বক্তব্যে, যেটা নিয়েই মূলত আজ লিখতে বসেছি। ওই যে লিখলাম, এই বিতর্কসভাগুলিতে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের পাশাপাশি কিছু তথাকথিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের আনা হয়। হয়তো নিরপেক্ষ, রাজনৈতিক রংহীন একটা মতামতের তাগিদেই আনা হয় ওনাদের। কিন্তু এখানেই আমার প্রশ্ন, সত্যিই কি নিরপেক্ষতা বলে কিছু অবশিষ্ট আছে আর? নিরপেক্ষতা - এই শব্দটার অভিধান ছাড়া আর কোথাও কোনো অস্তিত্ব আছে কি আর?
এটা কোনো তাত্ত্বিক প্রশ্ন বা rhetorical question করছি না, সত্যিই জানতে চাইছি। কারণ বিগত বেশ কয়েকবছরে, এবং বিশেষত গত কয়েকমাসে আমার ক্রমেই এই বিশ্বাসটা বদ্ধমূল হচ্ছে, যে আমাদের কারুর মধ্যেই আর কোনো নিরপেক্ষতা বোধহয় বাকি নেই। না আমাদের মতো খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে। না বুদ্ধিজীবী আখ্যা দিয়ে যে লেখক, নাট্যকার বা অভিনেতাদের রোজ টেলিভিশনের পর্দায় আনা হয় তাঁদের মধ্যে!
নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে কয়েকটা উদাহরণ দিই।
আমার এক স্কুলজীবনের বন্ধু (শেক্সপীয়ার বলেছিলেন নামে কি আসে যায়, অতএব ..) অতি বড় বিজেপি ভক্ত। ইদানিং সংবাদমাধ্যমে যে আদি বনাম নব্য বিজেপি নিয়ে কথাবার্তা শুনি, সেই সূত্র ধরে বললে আমার এই বন্ধু নব্য নয়, বরং আদি বিজেপি সমর্থকই বলা যেতে পারে তাকে। গত বেশ কয়েকবছর ধরেই সে নিয়মিতভাবে ফেসবুকে পোস্ট করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন যোজনা, কৃতিত্ব ইত্যাদির কথা। তা সে ভালো, ওর ব্যক্তিগত পছন্দ, তাতে কোনো মুশকিল নেই। সমস্যাটা হলো, যতটা উৎসাহ ও সক্রিয়তার সঙ্গে আমার এই বন্ধু বিজেপির তথাকথিত ভালো দিকগুলো প্রচার করে সোশ্যাল মিডিয়াতে, ঠিক ততটাই নিষ্ক্রিয় তাকে দেখি যখন বিজেপির সমালোচনা করার সময় আসে।
আর ঠিক এখানেই আমার প্রশ্ন, যে কেন এতো নিরপেক্ষতার অভাব? কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো ব্যক্তিত্ব, কেউই তো নিখুঁত, ত্রূটিহীন বা perfect নয়। হতে পারে না। আমি যদি সত্যিই একটা দলের বা কোনো এক রাজনীতিবিদের সমর্থক হই, শুভাকাঙ্খী হই, তাহলে কি ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বা ধরিয়ে দিয়ে সতর্ক করে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
কেন আমার বিজেপি সমর্থক বন্ধুকে কোনোদিন প্রশ্ন তুলতে দেখি না PM National Relief Fund (PMNRF) থাকা সত্ত্বেও PM Cares নামে একটা নতুন তহবিল সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা নিয়ে? এই PM Cares এর টাকা কোথায় যাচ্ছে, বা কোন খাতে খরচ হচ্ছে তার কোনো স্বচ্ছতা নেই কেন, এই প্রশ্ন কেন কোনো মোদীভক্তকে করতে শুনি না? বা, আমার কোনো বিজেপি সমর্থক বন্ধুকে কেন জোরগলায় সমালোচনা করতে দেখি না যখন প্রধানমন্ত্রী একটা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিজের নামে করেন? সারা দেশে অনেক নেহরু, ইন্দিরা বা রাজীব স্টেডিয়াম আছে, তাই মোদীর নামে নয় কেন - এটা কি কোনো যুক্তি হতে পারে? নেহরু-গান্ধী পরিবারের থেকে আলাদা হবেন, এই আশাতেই তো জনগণ ওনাদের সরকারে এনেছিল! এই কি তার নমুনা?
লোকসভা ভোটে আমি মোদী সরকারের প্রতি আস্থা দেখিয়ে বিজেপিকে ভোটটা দিতেই পারি, কিন্তু তার তো এই মানে হতে পারে না যে আমি তাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদের সঙ্গেও সহমত হবো! বা, বিজেপির কোনো এক বিধায়ক যখন হাথরস কাণ্ডের অভিযুক্তদের সমর্থনে সভা করেন, আমি তার কড়া ভাষায় নিন্দা করবো না? বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে ক্রমাগত ঘটে চলা সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচার নিয়ে চুপ থাকবো, স্রেফ একটা পার্টিকে সমর্থন করি বলে? আর, প্রচার যদি আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে জোরগলায় করতে পারি, তাহলে সমালোচনা বা ভর্ৎসনা তো নির্জনে নিভৃতে নিজের মনে মনে হতে পারে না!
আরও কয়েকটা উদাহরণ দিই, তবে তার আগে একটা কথা পরিষ্কার করে দেওয়া দরকার। আমি কিন্তু এখানে কোনো সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদের কথা বলছি না। যারা পার্টি করেন, বা কোনো দলের সঙ্গে জড়িত তাঁদের বাধ্যবাধকতা আমি বুঝি, তাই তাঁদের থেকে প্রকাশ্যে নিরপেক্ষতা আশা করা অনুচিত। চাইলেও ওনারা পার্টি হাইকমান্ড বা নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারবেন না। বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলের টিকিটে জেতার পর মুনমুন সেন ২০১৫ সালে একবার মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী ভালোই কাজ করছেন, এবং আমাদের উচিত ওনাকে আরও সময় দেওয়া। কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাঁর পার্টি বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে এই মতামত একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত এবং পার্টি এর সঙ্গে সহমত নয়। মুনমুনদেবীও নিজের "ভুল" বুঝতে পারেন এবং এরপর এরকম বেফাঁস মন্তব্য আর খুব একটা শোনা যায়নি।
তাই ওনাদের কথা নাহয় নাই বললাম আজ। কিন্তু আমরা যারা পার্টি করি না, আমাদের পক্ষপাতশূন্য হতে এতো অস্বস্তি কেন?
আচ্ছা, রামভক্তদের কথা তো অনেক হলো। এবার তাহলে রামের নাম শুনলেই যিনি আজকাল একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন, সেই দিদির ভক্তদের কথা একটু বলি। আমার অনেক বন্ধুই আজকাল ফেসবুকে বাংলার বুকে গত দশ বছরে কি কি উন্নয়ন হয়েছে তার ফিরিস্তি দিচ্ছে দেখি। বেশ ভালো কথা, বিকাশ রায় আর বিকাশ পাঁজির পর যদি সত্যিই কোনো বলার মতো বিকাশ এসে থাকে বাংলায়, তাহলে তো গর্বের ব্যাপার নিঃসন্দেহে। অথচ, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে "কিম্ভূতকিমাকার" বা "শালা" বলেন, কিংবা "কোমরে দড়ি পরিয়ে ঘোরাবো" বলেন, তখন এই দিদিভক্তদের একজনকেও তো দেখি না তার মৃদু নিন্দা করেও কোনো পোস্ট করতে। মমতাদেবী নরেন্দ্র মোদীকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেই পারেন। মতাদর্শগত বিভেদও থাকতেই পারে। কিন্তু একজন জনতার দ্বারা নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর একজন জনতার দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সম্বন্ধে এরকম ভাষা ব্যবহার কি শালীন?
বুদ্ধিজীবীদের কথা বলছিলাম। ইদানিং নাট্যকার-অভিনেতা কৌশিক সেনকে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় টেলিভিশনে নিজের "নিরপেক্ষ" মতামত দিতে। কৌশিকবাবু একজন কৃতী মায়ের সুযোগ্য পুত্র ও একজন সুদক্ষ অভিনেতা এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ একেবারেই নেই। কিন্তু তাই বলে নিরপেক্ষ? সত্যি?
কয়েকমাস আগে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে, আমরা জানি। কেউ বা কারা মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সময় "জয় শ্রী রাম" ধ্বনি দেন, এবং মুখ্যমন্ত্রী তাতে অপমানিত বোধ করেন। অনভিপ্রেত নিঃসন্দেহে! এরপরেই আমরা দেখলাম কৌশিকবাবু সংবাদমাধ্যমকে বললেন, যেটা ঘটেছে সেটা অশালীন। কিন্তু এই কৌশিক সেনকে তো আমরা আজ অবধি একবারও দেখলাম না মুখ্যমন্ত্রীর মুখের ভাষাকে অশালীন বলতে? উনি তো কোনোদিন টিভি ক্যামেরার সামনে বললেন না, যে একটা রাজ্য যারা নাকি নিজেদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বিশেষ গর্ববোধ করে, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে জনসমক্ষে "শালা", "হোঁদলকুতকুত" বা "কিম্ভূতকিমাকার" একেবারেই শোভা পায় না?
কৌশিকবাবু আরও বললেন যে বিজেপির সংস্কৃতির মধ্যে নাকি একটা ভয়ের ব্যাপার আছে। ওনার ব্যক্তিগত মতামত এটা হতেই পারে, কোনো সমস্যা নেই তাতে। আমিও কিছুটা সহমত! "জয় শ্রী রাম" বলে তরোয়াল বা গদা বার করে যারা, তাদের কিছুটা ভয় লাগে বৈকি! কিন্তু তৃণমূলের যুবনেতা তথা মমতাদেবীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একটি সভায় বললেন, "ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেবো! আদিম হিংস্র মানসিকতার আমি যদি কেউ হই, তাহলে স্বজনহারানো চিতায় তোদের লাশ তুলবো", এতে কৌশিকবাবু ভয়ের কিছু পেলেন না?!
কেন এই দ্বিচারিতা? কৌশিকবাবুকে তো আমরা শ্রদ্ধা করি! উনি তো শিক্ষিত! উনি তো সক্রিয়ভাবে কোনো পার্টি করেন না, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন! ওনাকে তো আমরা তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে নয়, বরং নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ হিসেবেই দেখি! তাহলে কেন ওনার মতামত এত একপেশে, কেন উনি দুই দলেরই ভুলগুলো ধরিয়ে দেন না? নিশ্চয় ওনার ব্যক্তিগত মতামত তো একটা থাকবেই, ভোটটাও কোনো একটা পার্টিকেই দেবেন। কিন্তু জনসমক্ষে একজন বুদ্ধিজীবী হয়ে এসেও, নিজেকে রংহীন বলে দাবি করেও কেন এই একচোখামি?
প্রায়ই আমরা বাংলার বুদ্ধিজীবীদের আলোচনাসভায় দেখি কিভাবে নরেন্দ্র মোদী এই দেশে মতবিরোধকে দমন করার চেষ্টা করছেন (suppression of dissent), সেই নিয়ে কথা বলতে। হক কথা, ন্যায্য কথা! কিন্তু কই, কাউকে তো দেখি না সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বা শফিকুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনা করতে? তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রাক্তন সাংবাদিক প্রাক্তন কংগ্রেসি এবং অধুনা বিজেপি প্রার্থী সন্ময়বাবুকে, বা আরামবাগ টিভির শফিকুল ইসলামকে যে কলকাতা পুলিশ রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়ে ২-৩ দিন অত্যাচার করেছিল, কই তার নিন্দা তো কেউ করেন না?
গেরুয়া, নীল-সাদা দুইয়ের কথাই যখন হলো, লালই বা বাদ যায় কেন? বেশ কিছু মানুষ, যাঁরা বামপন্থী আদর্শে দীক্ষিত, তাঁরা আজও নির্বাচন এলে নিয়ম করে গিয়ে কাস্তে হাতুড়িতে ভোটটা দিয়ে আসেন। এনাদের আদর্শের ভীত এতটাই শক্ত যে কিছু পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনও দলবদলু হয়ে যাননি। এনাদের আমি শ্রদ্ধা করি, কুর্নিশ জানাই এঁদের আদর্শচ্যুত না হওয়াকে। কিন্তু কই, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নাকি যে পার্টি, সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয় যে দল, তারা যখন স্রেফ কয়েকটা আসনের জন্যে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে হাত মেলালো, তখন তো জনসমক্ষে কারুর গলায় কোনো প্রতিবাদ শুনলাম না, বা কোনো পোস্ট দেখলাম না?
বেশ অনেক বছর ধরেই বামেদের সম্বন্ধে একটা কথা বলা হতো, যে কোনো নতুন মুখ উঠে এলো না। দেরিতে হলেও এ বছর সেই অভিযোগে কান দিয়ে বামেরা বেশ কিছু উচ্চশিক্ষিত তরুণদের টিকিট দিয়েছেন। শতরূপ তো চেনা মুখ, তা ছাড়াও ঐশী, মধুজা, মীনাক্ষী, সায়নদীপ, প্রতিকুর - এঁদের সবাইকেই প্রার্থী করার জন্যে নিঃসন্দেহে বামেদের এবার প্রশংসা প্রাপ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করলেন?
একটা পার্টির নামে secular শব্দটা থাকলে, আর কিছু আদিবাসীদের দলে ঠাঁই দিলেই কি তারা সত্যি সত্যি secular হয়ে যায়? সে তো বিজেপিতেও গুটিকয়েক সংখ্যালঘু মানুষদের আমরা দেখতে পাই! এই না সেই আব্বাস সিদ্দিকী যিনি নুসরত জাহানের নামে একাধিক ফতোয়া জারি করেছেন? এই কি সেই ভদ্রলোক নন যিনি কথায় কথায় মানুষকে কাফির আখ্যা দেন?
আর এই না সেই পার্টি যারা ২০০৬ সালে তারাপীঠে পুজো দেওয়া নিয়ে সুভাষ চক্রবর্তীকে শোকজ করেছিল? আজ কি হলো সেই আদর্শের? কেন কোনো বামপন্থী বন্ধুদের পোস্ট দেখি না এই নিয়ে? "চলছে না চলবে না" গোছের কোনো প্রতিবাদের কথা শুনতে পাই না কেন?
লিখতে লিখতে অনেক বেশি লিখে ফেললাম হয়তো। আসলে উদাহরণগুলো সব সাম্প্রতিক বাংলার ভোট সম্পর্কে হলেও, এই নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরেই ভাবনাচিন্তা করছিলাম। কেন বিজেপির নিন্দে করলেই liberal (বা তার অপভ্রংশে বেশ কিছু অশালীন শব্দ), বা কেন কংগ্রেসের নিন্দে করলেই bhakt বলে দেওয়া হবে কাউকে? বিধানসভায় আমি তৃণমূলকে ভোটটা দিতেই পারি। কিন্তু তাই বলে কথায় কথায় কদর্য ভাষায় কেন্দ্রকে আক্রমণ করে আখেরে বাংলার লাভ হচ্ছে না ক্ষতি, এই প্রশ্ন তুলতে কেন আমি ইতস্তত করবো?
এই বিশাল দেশে আজ কোরোনা vaccinationএর যে এই বৃহৎ কর্মকাণ্ড চলছে, একজন তৃণমূল সমর্থক হয়েও কি আমি পারি না এই কাজের জন্যে দরাজ গলায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশংসা করতে? কাজটা তো সহজ নয়! অথবা মূলত বাম ও কংগ্রেস শাসিত হয়েও কেরল যেরকম সার্বিক উন্নতি করেছে, একজন বিজেপি সমর্থক কেন পারবে না তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে?
এই কেনর কোনো উত্তর আমার কাছে সত্যিই নেই! শুধু এইটুকু দেখতে পাচ্ছি যে নিরপেক্ষতা ব্যাপারটা কিরকম যেন আমার মাথার চুলের মতই হ্রাস পেতে পেতে বিপন্ন হয়ে উঠেছে! কোথায় যেন আমাদের প্রিয় নেতা নেত্রীদের যুক্তিসম্মত সমালোচনা করতেও বাধো বাধো ঠেকছে, পাছে লোকে আমাকে অন্য দলের সমর্থক মনে করে! সেই ভয়ে অনেকসময় আমরা নিজেদের পছন্দের দলের কুকর্ম বা কুকথা কে ভর্ৎসনা করতে তো পারছিই না, উল্টে সমর্থনে ভুলভাল যুক্তি দিয়ে ফেলছি!
খুব একটা ভালো লক্ষণ কি? বোধহয় নয়!
যাইহোক, আমাদের রাজ্যে নির্বাচন আসন্ন। আসন্নও বা বলছি কেন, মেদিনীপুর ঝাড়গ্রামে তো আজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। আশা করি যেন শান্তিতে, চোখ কান খোলা রেখে ভোটটা দিতে পারেন নিজের পছন্দের প্রার্থী বা দলকে। শুধু একটাই অনুরোধ, দয়া করে নিজের ভিতরের নিরপেক্ষ মানুষটাকে বাইরে আসতে দিন! চেপে ভিতরে বসিয়ে দেবেন না! নিজের মতো করে নিজের মত প্রকাশ করতে দিন ওকে! একমাত্র তাহলেই সম্ভব সবকা বিকাশ! তাহলেই ঘটবে মা মাটি মানুষের উন্নয়ন!

![[SATIRE] Man Wins Nobel for LinkedIn Profile; Wife Files for Divorce](https://static.wixstatic.com/media/81b957_f1ad3e6944c14fbd872b17d76624bef2~mv2.png/v1/fill/w_442,h_250,fp_0.50_0.50,q_35,blur_30,enc_avif,quality_auto/81b957_f1ad3e6944c14fbd872b17d76624bef2~mv2.webp)
![[SATIRE] Man Wins Nobel for LinkedIn Profile; Wife Files for Divorce](https://static.wixstatic.com/media/81b957_f1ad3e6944c14fbd872b17d76624bef2~mv2.png/v1/fill/w_292,h_165,fp_0.50_0.50,q_95,enc_avif,quality_auto/81b957_f1ad3e6944c14fbd872b17d76624bef2~mv2.webp)
![[ছোটগল্প] জটায়ু কথা: জুপিটারের জলহস্তী](https://static.wixstatic.com/media/81b957_6d1ac3a4f5e845cbad6a69ce5cfa8a67~mv2.jpg/v1/fill/w_442,h_250,fp_0.50_0.50,lg_1,q_30,blur_30,enc_avif,quality_auto/81b957_6d1ac3a4f5e845cbad6a69ce5cfa8a67~mv2.webp)
![[ছোটগল্প] জটায়ু কথা: জুপিটারের জলহস্তী](https://static.wixstatic.com/media/81b957_6d1ac3a4f5e845cbad6a69ce5cfa8a67~mv2.jpg/v1/fill/w_292,h_165,fp_0.50_0.50,q_90,enc_avif,quality_auto/81b957_6d1ac3a4f5e845cbad6a69ce5cfa8a67~mv2.webp)


Comments